সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ইসকনের রথযাত্রা উৎসবের মেরুদণ্ড---শ্রীপাদ জয়ানন্দ প্রভু


শ্রীপাদ জয়ানন্দ প্রভু: ইসকনের রথযাত্রা উৎসবের মেরুদণ্ড

শ্রীপাদ জয়ানন্দ দাস (জিম কোর) আমেরিকার ওহিওতে এক উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬২ সালে ওহিও স্টেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং এ স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি সানফ্রান্সিসকোতে একটি পত্রিকায় শ্রীল প্রভুপাদের কৃষ্ণনামের মহিমা বিষয়ক একটি অনুষ্ঠানের সংবাদ জানতে পারেন এবং তিনি সেখানে অংশগ্রহণ করেন। শ্রীল প্রভুপাদকে দর্শন করে এবং তাঁর কথা শ্রবণ করার পর এক দুর্নিবার আকর্ষণ অনুভব করে মানবজন্ম সার্থক করার ব্রতে শ্রীল প্রভুপাদের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। শ্রীপাদ জয়ানন্দ প্রভু ছিলেন সেবার প্রতি অত্যন্ত নিষ্ঠাপরায়ণ। মাত্র ২৮ বছর বয়সেই শ্রীপাদ জয়ানন্দ প্রভু সানফ্রানসিসকো মন্দিরের অধ্যক্ষরূপে দায়িত্ব লাভ করেন। শ্রীপাদ জয়ানন্দ প্রভু সম্বন্ধে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে শ্রীল মুকুন্দ গোস্বামী বলেছেন, “তিনি তৎকালীন ভক্তদের মধ্যে সবচেয়ে দায়িত্ববান ও নিঃস্বার্থ ছিলেন। কেউ তাঁর মধ্যে একফোঁটা স্বার্থ গন্ধও খুঁজে পাবে না। তিনি সব সময় সেবায় ব্যস্ত থাকতেন। তাঁকে আমরা কখনও দাঁড়িয়ে বা বসে থাকতে দেখিনি। ভগবানের সেবার উদ্দেশ্যে যেকোনো কিছু করা থেকে পিছপা হতেন না। তখনকার দারিদ্র্যক্লিষ্ট মন্দির জীবনে মন্দিরের ভাড়ার টাকা যোগাড় করার উদ্দেশ্যে কোনো কোনো দিন তিনি পনের ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ড্রাইভিং করতেন।” যারাই তাঁকে প্রত্যক্ষ দেখেছেন, তারাই তাঁকে শ্রীশিক্ষাষ্টকের ‘অমানিনা মানদেন’রূপে দেখতে পেয়েছেন। তিনি মন্দিরের বর্জ্য পরিষ্কার থেকে রন্ধন পর্যন্ত সকল সেবাই বিনম্রচিত্তে সম্পাদন করতেন। তিনি সকলের প্রতিই ছিলেন দয়ার্দ্রচিত্ত। যে-ই তাঁর সংস্পর্শে আসতো, সে-ই কৃষ্ণভাবনায় আকৃষ্ট হতো। তিনি প্রতি বছর অত্যন্ত কঠোর পরিশ্রম করে রথযাত্রার আয়োজন করতেন। তিনি সানফ্রানসিসকো সহ বিশ্বের আরও কয়েকটি স্থানে রথযাত্রার আয়োজন করেন। তিনি ছিলেন তখনকার সময়ের রথযাত্রা উৎসবের মেরুদণ্ড।
রথযাত্রার আয়োজনের শুরু হতে সমগ্র অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি পর্যন্ত তিনি রাত্রে মাত্র তিন ঘণ্টা বিশ্রাম নিয়ে সকল বিষয়ের দেখাশোনা করতেন। ১৯৭৬ সালে নিউইয়র্কে রথযাত্রার আয়োজনকালে হঠাৎ তাঁর শরীরে জ্বালাপূর্ণ বিস্ফোটক দেখা যায়। একজন ভক্ত এটিকে ক্যান্সারের লক্ষণ বলে শণাক্ত করলেও জয়ানন্দ প্রভু সেটি শ্রীল প্রভুপাদ এবং অন্যান্য ভক্তদের না জানাতে অনুরোধ করেন, কেননা এতে সকলেই চিন্তিত হয়ে পড়বে। তাঁর দেহে জন্ম নেওয়া ঐ বিস্ফোটক রক্তের ক্যান্সার লিউকেমিয়ার লক্ষণ হিসেবে প্রকাশিত হয়। তিনি আর বেশিদিন থাকবেন না বুঝতে পেরে তাঁর অবশিষ্ট জীবনটুকু শ্রীল প্রভুপাদের সেবায় সংযুক্ত করেন। সকল ভক্ত হতাশাগ্রস্ত, আতঙ্কিত এবং দুঃখভারাক্রান্ত হয়ে ওঠেন। কিন্তু জয়ানন্দ প্রভু তাঁর বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা সত্ত্বেও ছিলেন সম্পূর্ণ নির্ভীক চিত্ত এবং কৃষ্ণসেবার প্রতি পূর্ণমাত্রায় সমর্পিত।
১৯৬৭ সালে তিনি শ্রীল প্রভুপাদকে গ্রন্থ প্রচারের উদ্দেশ্যে ট্যাক্সি চালিয়ে একমাত্র সঞ্চিত পাঁচ হাজার ডলার দিয়েছিলেন এবং পরবর্তীতে তাঁর শেষ চিঠির সাথে আরও পাঁচ হাজার ডলারের গিফট চেক সংযুক্ত করে দেন, যা তাঁর চিকিৎসার জন্য সঞ্চিত করে রাখা ছিল। শ্রীল প্রভুপাদের সেবায় তিনি এতটাই উৎসর্গীকৃত ছিলেন যে, অপ্রকট কালের আগেও তিনি বলেছিলেন, “আমি শ্রীল প্রভুপাদের মিশন সফল করার জন্যে আবার এ জগতে আসতে চাই। এটি হচ্ছে গুরুসেবকের আদর্শ ভাব নিঃস্বার্থ গুরুসেবা। ১৯৭৭ সালের ১লা মে তিনি লস্ এঞ্জেলস্ মন্দিরে (নব দ্বারকা) নিজ কক্ষে অপ্রকট হন।
পরবর্তীতে শ্রীল প্রভুপাদ বিশ্বব্যাপী সমগ্র ইসকন মন্দিরসমূহে শ্রীপাদ জয়ানন্দ প্রভুর তিরোভাব তিথি অন্য সমস্ত বৈষ্ণব আচার্যগণের তিরোভাব তিথির মতোই গাম্ভীর্যপূর্ণভাবে উদযাপন করার নির্দেশ দেন।

YouTube: https://www.youtube.com/watch?v=tnH0uwSArGE

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু ও রামানন্দ রায় সংবাদ

  শ্ৰীরামানন্দ রায় রাজা শ্ৰী প্ৰতাপরুদ্রের অধীন পূৰ্ব্ব ও পশ্চিম গোদাবরীর বিশ্বস্ত শাসন কৰ্ত্তার পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। চৈতন্য মহাপ্ৰভু যখন দক্ষিণ দেশে যাত্ৰা করেন, শ্ৰীসাৰ্বভৌম আচার্য্য বিশেষ অনুরোধ করেন মহাপ্রভু যেন শ্ৰীরামানন্দ রায়ের সঙ্গে মিলিত হন । “তোমার সঙ্গে যোগ্য তেঁহো একজন, পৃথিবীতে রসিক ভক্ত নাহি তার সম''।।চৈঃচঃ মধ্যঃ শ্রীচৈতন্য মহাপ্ৰভু দক্ষিণ দেশ অভিমুখে যাত্ৰা করেন। হরিনামের প্রেম বিতরণ করতে করতে এলেন পশ্চিম গোদাবরীর তীরে । পন্ডিত সাৰ্ব্বভৌমের অনুরোধ অনুযায়ী শ্ৰীরামানন্দ রায়ের সঙ্গে মিলিত হবার ইচ্ছা মহাপ্ৰভুর মনে সদা জাগ্রত ছিল । শ্ৰীমহাপ্ৰভু গোদাবরীর মনোহর তটে এক বৃক্ষমূলে বসে আছেন । তার অঙ্গ কান্তিতে চতুৰ্দ্দিক যেন আলোকিত হচ্ছিল । এমন সময় অনতিদূরে রাজপথ দিয়ে স্নান করতে যাচ্ছেন শ্ৰীরামানন্দ রায়, সাথে বৈদিক ব্ৰাহ্মণগনের বিবিধ বাজনা । শ্ৰীরামানন্দ রায় দূর থেকে উপবিষ্ট বৃক্ষমুলে কান্তিযুক্ত সন্ন্যাসীবরকে একদৃষ্টিতে দৰ্শন করতে লাগলেন এবং মহাপ্ৰভুও তঁকে অপলক নেত্ৰে দেখতে লাগলেন । নয়নে নয়নে হল মিলন । তারপর শ্ৰীরামানন্দ পালকি থেকে নেমে শ্ৰীমহাপ্ৰভুর চরনে দন্ডবৎ ক...

কৃষ্ণ কোন ভক্তকে কীভাবে সাহায্য করেন?????

  কৃষ্ণ কোন ভক্তকে কীভাবে সাহায্য করেন ? প্রশ্ন : আমার প্রশ্নটি খুব তুচ্ছ, কিন্তু তবুও আমি জানতে চাই কীভাবে কৃষ্ণ কোন ভক্তকে সাহায্য করেন? শ্রীল জয়প তাকা স্বামী গুরুমহারাজ: কৃষ্ণ বিভিন্ন উপায়ে একজন ভক্তকে সাহায্য করতে পারেন। আমরা তাঁর অনুগ্রহের পন্থাগুলিকে পরিমাপ করতে পারি না। যেমন ধরুন, একটি মজার গল্প আছে। একটি বড় বন্যাকবলিত এলাকায় এক লোক ছিল। সে তার ঘরে গিয়ে বলত, হে ভগবান! আমাকে এই বিশাল বন্যা থেকে উদ্ধার কর। আর তখন একটি নৌকা এল, সে বলল, না না, আমি চাই কেবল ভগবান এসে আমাকে উদ্ধার করবে। এরপর হেলিকপ্টার এল। না, না, আমাকে কেবল ভগবানই উদ্ধার করবে। এমনকি যখন কৃষ্ণ যখন নিজে সেই ব্যক্তির সামনে উপস্থিত হলেন, সে বলল, তুমি কেন আমাকে আগে বাঁচাওনি? তিনি বললেন, আমি একটি নৌকা পাঠালাম, একটি হেলিকপ্টার পাঠালাম, তুমি আর কী চাও? তো এভাবে তিনি বাহ্যিকভাবে বা অভ্যন্তরীণ উপায়ে সহায়তা করতে পারেন। গীতায় বলা আছে কৃষ্ণ জ্ঞান, স্মৃতি ও বিস্মৃতি দান করেন। সুতরাং তিনি আমাদের সংশয়ও নাশ করেন। ~শ্রীল জয়পতাকা স্বামী গুরুমহারাজ ২৪শে জুলাই, ২০১৮ চেন্নাই, ভারত

মহান বৈষ্ণব আচার্য শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুরের তিরোধান তিথি

২৬/১২/২০১৮ মহান বৈষ্ণব আচার্য শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুরের তিরোধান তিথিতে গৌড়িয় সিংহপুরুষখ্যাত এই মহান আচার্যের জীবনী জানার জন্য পড়ুন নিচের বিশেষ লেখাটি শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু যৌবনে মাত্র ৪৮ বছর বয়সে জগত থেকে অন্তর্হিত হন। যদিও তাঁর পার্ষদ এবং দৃঢ়চেতা পরম্পরা আচার্যগণ, মহান বৈষ্ণবগণ এই অভিযান এগিয়ে নিয়ে গেছেন, কিন্তু একসময় কিছুকাল পরে মহাপ্রভুর সংকীর্তন আন্দোলন অন্তর্হিত হয়। মহাপ্রভুর শিক্ষা, মহাপ্রভুর নিদের্শনা এবং মহাপ্রভুর ধাম এই জগৎ থেকে অন্তর্হিত হয় এবং তদস্থলে সকল অপসম্প্রদায় গুলো আবির্ভূত হয়ে এমন শিক্ষার বিস্তার ঘটালো যা সম্পূর্ণরূপে মহাপ্রভুর শিক্ষার বিপরীত। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর শিক্ষা সম্পূর্ণরূপে পবিত্র ধর্মের নীতির ভিত্তিতে গঠিত, কিন্তু তাদের সেই ক্রিয়াকর্মগুলো ছিল সম্পূর্ণ অধার্মিক। এটি কলিযুগের আরেকটি চরিত্র। এই যুগ অধর্মের, তাই অধর্মীয় নীতিসমূহের ব্যাপক প্রসার ঘটবে এবং ধার্মিক নীতিসমূহ উপেক্ষিত হবে। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর অন্তর্ধানের পরে তা ঘটেছিল। অল্পকথায় বলতে গেলে, তাঁরা চৈতন্য মহাপ্রভুর নামে ধর্মের স্তম্ভস্বরূপ ৪টি বিধিনিষেধ ভঙ্গ ...