লীলাকাহিনীর পুনঃকথন-
গতসপ্তাহে শুক্রবারের স্মৃতিচারণ, শ্রীল প্রভুপাদের শিষ্যা শ্রীমতি রচিতাম্বরা দেবী দাসী কর্তৃক কথিত হয়েছিল। এখানে সেই একই লীলা তাঁর কন্যা শ্রীমতি জয় রাধিকা দেবী দাসী কর্তৃক পুনঃকথিত হয়েছে, যিনি হলেন গুরুমহারাজের শিষ্যা।
আমি গুরুমহারাজের প্রতাপশালী লীলাকাহিনীগুলো পছন্দ করি। সেগুলো অনন্য, সিগ্ধ শীতলতাপূর্ণ এবং বেশ মজাদার এবং এককথায় চমৎকার। সেগুলো সর্বদা আমাকে মনে করিয়ে দেয় যখন তিনি, আমার পিতার নির্মানকৃত ধনুকে জ্যাঁ বেঁধেছিলেন এবং তীর ছুড়েছিলেন। এটা অনেকটা অর্জুনকে দেখার মত মনে হয়েছিল। জয় গুরুমহারাজ কি জয়!!
আমি শঙ্কিত যে, সেসময়ের কোন ছবি নেই...এটা অনেক বছর পূর্বে মায়াপুরের প্রথম দিকের কাহিনী। আমাদের তখন কোন ক্যামেরা ছিল না। আমার পিতা অর্জুনের মত একটা ধনুক নির্মান করতে চেয়েছিলেন। এটা একটা সুন্দর নির্মান ছিল। যেখানে ফুল, পাতা, আঙ্গুর লতা ইত্যাদি দ্বারা সজ্জিত ছিল। কিন্তু তিনি এতই সুন্দর কাজ করেছিলেন যে, এটা খুবই মজবুত ছিল। তিনি ধনুকটি বাঁকাতেই পারছিলেন না আর জ্যাঁ বাঁধার কি কথা! আমার পিতা খুবই শক্তসমর্থ ব্যক্তি ছিলেন কিন্তু তারপরও তাঁর দ্বারা ধনুকটি বাঁকানো সম্ভব হচ্ছিল না!
তারপর গুরু মহারাজ মায়াপুরে ফিরে এসেছিলেন এবং আমার পিতাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, তিনি তখনও ধনুক নির্মান সম্পূর্ণ করেছেন কিনা। আমার পিতা তাঁকে বলেছিলেন যে, তিনি সম্পূর্ণ করেছেন কিন্তু সেটা নিরর্থক হয়েছে কেননা তিনি সেটাতে জ্যাঁ বাঁধতে পারছেন না। গুরুমহারাজ জিজ্ঞেস করেছিলেন, তিনি এসে ধনুকটি দেখতে পারেন কিনা। যখন তিনি আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন তখন আমার পিতা ধনুকটি গুরুমহারাজের হাতে তুলে দিয়েছিলেন এবং আমাদের আশ্চার্যের বিষয় হল, গুরুমহারাজ কোন প্রকার প্রচেষ্টা ছাড়াই ধনুকটি বাঁকিয়ে জ্যাঁ বেধেছিলেন! এটা অনেকটা শ্রীরামের সীতাদেবীকে জয় করার জন্য ধনুক বাঁকিয়ে জ্যাঁ বাঁধার দৃশ্যের মত মনে হচ্ছিল! এককথায় অসাধারন!
তখন গুরুমহারাজ জিজ্ঞেস করেছিলেন আমার পিতা কোন তীর নির্মান করেছেন কিনা, তখন আমার পিতা একটা তীর গুরুমহারাজের হাতে দিয়েছিলেন এবং গুরুমহারাজ আমাদের নিয়ে মাঠে এসেছিলেন এবং জিজ্ঞেস করেছিলেন তিনি কোন লক্ষ্য ভেদ করবেন। মাঠটি ছিল সম্পূর্ণ সমতল কেবলমাত্র কিছুটা দূরে একটা লাঠি, মাটিতে সোজা দাড়িয়ে ছিল। আমার, মাতা গুরুমহারাজকে সেই লক্ষ্য ভেদ করতে বলেছিল, যদিও তা সম্পূর্ণ অসম্ভব মনে হচ্ছিল। গুরুমহারাজ সেটার দিকে শুধুমাত্র একবার তাঁকিয়ে বলেছিলেন, “ঠিকআছে” এবং তারপর সোজা আকাশের দিকে তীর ছুড়েছিলেন। এটা এতই উপরে উঠেছিল যে, সম্পূর্ণ অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল এবং আমরা সকলে নিশ্চিত ছিলাম যে, আমার সেটা আর দেখবো না। গুরুমহারাজ কেবল শান্তভাবে লাঠিটির দিকে তাঁকিয়েছিলেন।
হঠাৎ আমরা একটা সামান্য আঘাতের শব্দ এবং চিড়ে যাবার মত শব্দ পেলাম! তীরটি শুধুমাত্র লাঠিটির মধ্য-বরাবর পতিতই হয়নি, এটা লাঠিটির মধ্য-বরাবর চিড়ে ফেলেছিল!
শ্রীল জয়পতাকা স্বামী গুরুমহারাজ কি জয়!!!
২০ডিসেম্বর, ২০১৮
মন্তব্যসমূহ