সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কৃষ্ণকৃপাশ্রীমূর্তি শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ।

 ১৯৭৬ সাল ডিসেম্বর মাস

শ্রীল প্রভুপাদ খুব অসুস্থ হলেন। তখন প্রভুপাদ মিন্টোপার্কের আলবার্ট রোডের শ্রীরাধাগোবিন্দমন্দিরে অবস্থান করছেন। কোথাও বের হন না। প্রতিদিন প্রভুপাদকে দর্শন করার জন্য তার শিষ্য প্রফেসার ডাক্তার, এসিস্ট্যান্ট প্রফেসার আসতেন। আবার কোন প্রভুপাদের ঘনিষ্টজন সাথে ভাল ডাক্তার নিয়ে হাজির হতেন। কিন্তু প্রভুপাদ সবাইকে নিরাশ করতেন এই বলে যে, তিনি হোমিওপ্যাথি ও ভেষজ ঔষধ ছাড়া অন্যকিছু নিবেন না। একদিন রাতে প্রভুপাদ ভক্তিচারু মহারাজকে ডেকে আনালেন। এবং মহারাজ আসলে তিনি কোলকাতার একজনের ঠিকানা দিলেন যিনি কবিরাজ ডাক্তার। তাকে নিয়ে আসার জন্য। পরদিন ভক্তিচারু মহারাজ সেখানে গিয়ে দেখলেন সেই কবিরাজ মশাই প্রভুপাদ থেকেও অনেক বৃদ্ব ও তিনিও খুব অসুস্থ। ভক্তিচারু মহারাজ বৃদ্ব কবিরাজ মশাইকে প্রভুপাদের নাম বলতেই তার চোঁখ জ্বলজ্বল করে উঠল এবং বলল, ''চল আমি যাব''। এক সপ্তাহ সেই কবিরাজ মশাইয়ের ভেষজ গুলি খেয়ে প্রভুপাদ সম্পুর্ন সুস্থ হয়ে গেলেন এবং সেক্রেটারিকে বললেন লন্ডনে যাবেন দ্রুত প্লেনের টিকেটের ব্যবস্থা করতে। তিনি লন্ডন গেলেন ঠিকই কিন্তু কয়েকদিন পর তিনি আবারও প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে পড়লেন। এবার প্রভুপাদ তার সেক্রেটারিকে বৃন্দাবন যাওয়ার টিকেট আনতে বললেন। প্ৰভুপাদকে বিমান ধরতে হবে , তাই ভক্তরা হিসাব করে নিল , মন্দির থেকে কখন রওনা হলে , যথাসময়ে বিমান বন্দরে পৌছানো যাবে । প্ৰভুপাদ ভারতের বৃন্দাবন যাবেন অনেক সময়ের পথ একটু বিশ্রাম নিক কিন্তু না, তার বেশ কিছুক্ষণ আগেই যাওয়ার জন্য বার বার বলতে লাগলেন । ভক্তরা ভাবতে লাগল , মাত্ৰ কুড়ি মিনিটে বিমান বন্দরে পৌছানো যায়। ব্ৰহ্মানন্দকে প্ৰভুপাদ তাড়া করছেন যে , তার দুঘন্টা আগেই বেরোতে হবে। প্রভুপাদ ভুল করছেন না তো । ঘটনা হল কি , রাস্তায় দুৰ্ঘটনা হয়েছে, রাস্তায় তখন বিশাল যানজট । সবাই আটকে পড়েছে । দুঘন্টা আগে বের হওয়াতে যথা সময়ে প্ৰভুপাদ বিমানে চাপলেন । তিনি যদি মাত্র কয়েক মিনিট পরেও মন্দির থেকে বেরোতেন তাহলে তিনি বিমান ধরতে পারতেন না , আর যথাসময়ে মন্দির থেকে রওনা হলে যে কী হত, বলা মুশকিল । ভক্তরা উপলব্ধি করল , প্ৰভুপাদ জানতেন যে, আগে আগেই বেরোতে হবে , কিন্তু কীভাবে তিনি জানলেন ? সকাল সাতটার দিকে প্ৰভুপাদের গাড়ী বিমানবন্দর থেকে মন্দিরের সামনে এসে হাজির হল । প্ৰভুপাদ তখন খুবই দুর্বল , চলতে পারবেন না , তাই ভক্তরা তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য দোলনা চেয়ারের ব্যবস্থা করেছিল। গাড়ী থেকে বেরিয়ে চেয়ারে বসেই প্রভুপাদ বললেন , “ বিগ্ৰহ দৰ্শনের জন্য আমাকে নিয়ে চল''। প্রভুপাদকে তখন গৌরনিতাই - এর সামনে নিয়ে যাওয়া হল। প্ৰভুপাদ উঠে দাঁড়িয়ে প্ৰণাম জানালেন । তার গাল বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে লাগল । তিনি বসতে গেলেন , কিন্তু চেয়ারটা সেখানে না থাকায় , তিনি প্ৰায় পড়ে যাচ্ছিলেন । তমালকৃষ্ণ এবং অন্যান্য ভক্তরা প্রভুপাদকে ধরে ফেলল । সবাই ত্রস্ত হল যে, সমস্ত ভক্তরাই একে অপরের দিকে চেয়ে ভাবতে লাগল , “ আহা ! প্ৰভুপাদ এত অসুস্থ'' তারপর তিনি কৃষ্ণবলরামের বেদীর নিকট গিয়ে আবার উঠে দাঁড়ালেন । এবারে তার নিকটেই চেয়ার রাখা হল । আবার তার গাল বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল । শেষে তিনি রাধা শ্যামসুন্দর , আর ললিতা - বিশাখার বেদীর নিকট গিয়ে কিছুক্ষণের জন্য তাদের দৰ্শন করলেন । তারপর ফিরে তিনি বললেন , “আমার কক্ষে আমি সমস্ত ভক্তদের সঙ্গে দেখা করতে চাই''। প্রভুপাদের সেবকরা তাকে তার কক্ষে নিয়ে গেল। যে কক্ষে প্রভুপাদ তার অনুগামীদের নিয়ে অনেক তত্ত্বকথা, অনেক হাঁসি তামাশা করতেন। তিনি তার ডেস্কের পিছনে বসলেন, আর সমস্ত ভক্তরা তার কক্ষে ভিড় করে একত্ৰিত হল যে, কক্ষে যথেষ্ট স্থান না থাকায় ভক্তরা দরজা - জানালা দিয়ে দেখছিল সর্বত্ৰ ভক্তে - ভর্তি । প্ৰভুপাদ বললেন , “ আমি বৃন্দাবনে এসেছি দেহত্যাগ করার জন্য। তোমাদের তার জন্য অনুশোচনা করা উচিত নয় কেননা গ্রন্থাবলীর মধ্যে আমি তোমাদের জন্য সবকিছু প্ৰদান করেছি । তোমরা যদি কেবল আমার গ্ৰন্থাবলী পাঠ কর , আর তোমাদের গুরুভ্ৰাতাদের সঙ্গে সহযোগিতা কর , তাহলে সব কিছুই সুন্দরভাবে চলবে''। কয়েকজন ভক্ত ক্ৰন্দন করতে লাগল , “ও , না , প্ৰভুপাদ । আপনি আমাদের ছেড়ে যাবেন না''। পুনরায় প্ৰভুপাদ একই কথা বললেন, “আমার গ্ৰন্থাবলীর মধ্যে আমি রয়েছি । আমার গ্ৰন্থাবলী পাঠ কর আর সবাই সবাইকে সহযোগিতা কর''।। 
হরেকৃষ্ণ।। 
।।জয় শ্রীল প্রভুপাদ।।


শ্রীশ্রী রাধাকৃষ্ণ গৌর-নিত্যানন্দ মন্দির
ইসকন, চৌমুহনী, নোয়াখালী।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু ও রামানন্দ রায় সংবাদ

  শ্ৰীরামানন্দ রায় রাজা শ্ৰী প্ৰতাপরুদ্রের অধীন পূৰ্ব্ব ও পশ্চিম গোদাবরীর বিশ্বস্ত শাসন কৰ্ত্তার পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। চৈতন্য মহাপ্ৰভু যখন দক্ষিণ দেশে যাত্ৰা করেন, শ্ৰীসাৰ্বভৌম আচার্য্য বিশেষ অনুরোধ করেন মহাপ্রভু যেন শ্ৰীরামানন্দ রায়ের সঙ্গে মিলিত হন । “তোমার সঙ্গে যোগ্য তেঁহো একজন, পৃথিবীতে রসিক ভক্ত নাহি তার সম''।।চৈঃচঃ মধ্যঃ শ্রীচৈতন্য মহাপ্ৰভু দক্ষিণ দেশ অভিমুখে যাত্ৰা করেন। হরিনামের প্রেম বিতরণ করতে করতে এলেন পশ্চিম গোদাবরীর তীরে । পন্ডিত সাৰ্ব্বভৌমের অনুরোধ অনুযায়ী শ্ৰীরামানন্দ রায়ের সঙ্গে মিলিত হবার ইচ্ছা মহাপ্ৰভুর মনে সদা জাগ্রত ছিল । শ্ৰীমহাপ্ৰভু গোদাবরীর মনোহর তটে এক বৃক্ষমূলে বসে আছেন । তার অঙ্গ কান্তিতে চতুৰ্দ্দিক যেন আলোকিত হচ্ছিল । এমন সময় অনতিদূরে রাজপথ দিয়ে স্নান করতে যাচ্ছেন শ্ৰীরামানন্দ রায়, সাথে বৈদিক ব্ৰাহ্মণগনের বিবিধ বাজনা । শ্ৰীরামানন্দ রায় দূর থেকে উপবিষ্ট বৃক্ষমুলে কান্তিযুক্ত সন্ন্যাসীবরকে একদৃষ্টিতে দৰ্শন করতে লাগলেন এবং মহাপ্ৰভুও তঁকে অপলক নেত্ৰে দেখতে লাগলেন । নয়নে নয়নে হল মিলন । তারপর শ্ৰীরামানন্দ পালকি থেকে নেমে শ্ৰীমহাপ্ৰভুর চরনে দন্ডবৎ ক...

কৃষ্ণ কোন ভক্তকে কীভাবে সাহায্য করেন?????

  কৃষ্ণ কোন ভক্তকে কীভাবে সাহায্য করেন ? প্রশ্ন : আমার প্রশ্নটি খুব তুচ্ছ, কিন্তু তবুও আমি জানতে চাই কীভাবে কৃষ্ণ কোন ভক্তকে সাহায্য করেন? শ্রীল জয়প তাকা স্বামী গুরুমহারাজ: কৃষ্ণ বিভিন্ন উপায়ে একজন ভক্তকে সাহায্য করতে পারেন। আমরা তাঁর অনুগ্রহের পন্থাগুলিকে পরিমাপ করতে পারি না। যেমন ধরুন, একটি মজার গল্প আছে। একটি বড় বন্যাকবলিত এলাকায় এক লোক ছিল। সে তার ঘরে গিয়ে বলত, হে ভগবান! আমাকে এই বিশাল বন্যা থেকে উদ্ধার কর। আর তখন একটি নৌকা এল, সে বলল, না না, আমি চাই কেবল ভগবান এসে আমাকে উদ্ধার করবে। এরপর হেলিকপ্টার এল। না, না, আমাকে কেবল ভগবানই উদ্ধার করবে। এমনকি যখন কৃষ্ণ যখন নিজে সেই ব্যক্তির সামনে উপস্থিত হলেন, সে বলল, তুমি কেন আমাকে আগে বাঁচাওনি? তিনি বললেন, আমি একটি নৌকা পাঠালাম, একটি হেলিকপ্টার পাঠালাম, তুমি আর কী চাও? তো এভাবে তিনি বাহ্যিকভাবে বা অভ্যন্তরীণ উপায়ে সহায়তা করতে পারেন। গীতায় বলা আছে কৃষ্ণ জ্ঞান, স্মৃতি ও বিস্মৃতি দান করেন। সুতরাং তিনি আমাদের সংশয়ও নাশ করেন। ~শ্রীল জয়পতাকা স্বামী গুরুমহারাজ ২৪শে জুলাই, ২০১৮ চেন্নাই, ভারত

মহান বৈষ্ণব আচার্য শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুরের তিরোধান তিথি

২৬/১২/২০১৮ মহান বৈষ্ণব আচার্য শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুরের তিরোধান তিথিতে গৌড়িয় সিংহপুরুষখ্যাত এই মহান আচার্যের জীবনী জানার জন্য পড়ুন নিচের বিশেষ লেখাটি শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু যৌবনে মাত্র ৪৮ বছর বয়সে জগত থেকে অন্তর্হিত হন। যদিও তাঁর পার্ষদ এবং দৃঢ়চেতা পরম্পরা আচার্যগণ, মহান বৈষ্ণবগণ এই অভিযান এগিয়ে নিয়ে গেছেন, কিন্তু একসময় কিছুকাল পরে মহাপ্রভুর সংকীর্তন আন্দোলন অন্তর্হিত হয়। মহাপ্রভুর শিক্ষা, মহাপ্রভুর নিদের্শনা এবং মহাপ্রভুর ধাম এই জগৎ থেকে অন্তর্হিত হয় এবং তদস্থলে সকল অপসম্প্রদায় গুলো আবির্ভূত হয়ে এমন শিক্ষার বিস্তার ঘটালো যা সম্পূর্ণরূপে মহাপ্রভুর শিক্ষার বিপরীত। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর শিক্ষা সম্পূর্ণরূপে পবিত্র ধর্মের নীতির ভিত্তিতে গঠিত, কিন্তু তাদের সেই ক্রিয়াকর্মগুলো ছিল সম্পূর্ণ অধার্মিক। এটি কলিযুগের আরেকটি চরিত্র। এই যুগ অধর্মের, তাই অধর্মীয় নীতিসমূহের ব্যাপক প্রসার ঘটবে এবং ধার্মিক নীতিসমূহ উপেক্ষিত হবে। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর অন্তর্ধানের পরে তা ঘটেছিল। অল্পকথায় বলতে গেলে, তাঁরা চৈতন্য মহাপ্রভুর নামে ধর্মের স্তম্ভস্বরূপ ৪টি বিধিনিষেধ ভঙ্গ ...