নোয়াখালীর পরমার্থিক বার্তাঃ কালাচাঁন মত ছেড়ে ইসকন মত গ্রহন করায় নারায়ণগঞ্জ লাঙ্গলবন্দে একঘরে তিন পরিবার।
জল দরকার। আনতে গেলে বাধা। মন্ডপে পূজা, তাতেও মানা। গেলেও বের করে দেয়া হয়। প্রতিবেশিদের কড়া ভষায় বলে দেওয়া হয়েছে, কেউ ওদের বাড়ি ঢুকতে পারবে না। ওদের দোকানে যাওয়া যাবে না। সব ধরনের লেনদেন নিষিদ্ধ। কোনো সম্পর্ক রাখা যাবে না। কথার অমান্য হলে তারও একই পরিণতি হবে। এমন সব নিষেধাজ্ঞা দিয়ে দেড় বছর ধরে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার তিনটি হিন্দু পরিবারকে একঘরে করে রেখেছেন একই সম্প্রদায়ের মাতব্বররা। অভিযোগ রয়েছে, সামাজিক ভাবে হেয় করতে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলাও দেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় খুব কষ্টে দিন কাটছে এই তিন পরিবারের সদস্যদের। স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কালাচাঁন মত ছেড়ে ইসকন মত গ্রহন করায় বাবুল চন্দ্র দাস, তার ভগ্নি পতি ধীরেণ চন্দ্র দাস ও ধীরেণের ছোট ভাই বীরেন চন্দ্র দাসের পরিবারকে একঘরে করে রাখা হয়েছে। তারা লাঙ্গলবন্দ এলাকার বাসিন্দা। যে মতভিন্নতার জন্য একঘরে করা হয়েছে, প্রকৃতপক্ষে উভয় মতের লোকজনই কৃষ্ণানুরাগী। কালাচাঁন আদি আর ইসকন হল আমলের মত। তাছাড়া ধর্মীয় মত-পথের কারণে একঘরে করার কোনো আইন নেই। উল্টো এ ধরনের পদক্ষেপ অপরাধ হিসেবে গন্য হওয়ার কথা। উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পেলেও পরিবার তিনটি প্রশাসনের কোনো সহযোগীতা পায়নি। ধীরেন চন্দ্র দাস ও বাবুল চন্দ্র দাস জানান, প্রায় দুই বছর আগে তাদের তিনটি পরিবার ইসকন মতবাদে দীক্ষা নেয়। শুধু এ কারনে ২০১৭ সালের ১০ জুলাই থেকে তাদের একঘরে করে রেখেছেন লাঙ্গলবন্দ এলাকার ঋষিপাড়া পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি মনিরাম দাস, পূজা উদযাপন পরিষদ বন্দর থানার সাংগঠিক সম্পাদক রিপন দাস, রামধন দাস ও রঞ্জিত দাস। ধর্মীয়-সামাজিক-সাংস্কৃতিক কোনো অনুষ্ঠানে তাদের যেতে দেওয়া হয় না। সমাজে কথা বলাও নিষেধ। একই কারনে ধীরেন চন্দ্র দাসকে বের করে দেওয়া হয়েছে পঞ্চায়েত কমিটি থেকে। ধীরেনের স্ত্রী সাগরী দাস জানান, কয়েক মাস আগে বাড়ির টিউবয়েলটি নষ্ট হয়ে যায়। পাশে জা-এর বাসা থেকে জল নিচ্ছিলেন তারা। কিন্তু মনিরাম দাস ও রিপন দাস তাদের হুমকি দেন, ওদের জল দিয়ে তাদেরও একঘরে করা হবে। এই ভয়ে জল দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। এক আত্মীয়ের বাসায় গীতাপাঠের নিমন্ত্রণ দিলে ওই পরিবারকে হুমকি দেওয়া হয় এবং বলে তারা গেলে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। ওরা নিমন্ত্রণ ফিরিয়ে নেয়। ধীরেনের ছেলে দুলাল দাসকে মাদক দিয়ে ফাসানো হয়েছে বলে সুনিদিষ্ট অভিযোগ রয়েছে রিপন দাস নামক পুলিশের সোর্স এর বিরুদ্ধে। দুলাল জানান, সুযোগ বুঝে তাদের দোকানে ইয়াবা রেখে তাকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেন রিপন। ইসকন মত গ্রহন করায় তাকে দুই মাস জেল খাটতে হয়েছে। বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন ঢাকা বিভাগের (দক্ষিণ) সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান মাসুম বলেন,এটি আইনের চরম লঙ্ঘন। এর বিরুদ্ধে জরুরি ব্যবস্থা নিতে পুলিশের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি। নারায়নগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মনিরুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। কামতাল ফাঁড়ির ইনচার্জকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।।। এবং আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ ইসকন এর নিকট অনুরোধ করা হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ লাঙ্গলবন্দে একঘরে তিন পরিবার পাশে দাড়ানোর জন্য।
উপরোক্ত বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ টিভির ধারণকৃত ভিডিও টি দেখতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন।
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=1875447402554041&id=100002663978484
মন্তব্যসমূহ