নোয়াখালীর ইসকন কর্তৃক পরিচালিত শ্রীশ্রী রাধাকৃষ্ণ গৌর-নিত্যানন্দ মন্দির ও শ্রীশ্রী রাধা গোকুলানন্দ গৌরহরি মন্দিরে অন্নকূট মহোৎসব উদযাপন করা হয়।
শ্রীল জীব গোস্বামী তাঁর ‘গোপাল চম্পু ‘ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন – শরতের ঠিক মাঝামাঝি আসে কার্তিক মাস। সেই সময় এক বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন ব্রজবাসীরা। সেই সময় তাঁরা ইন্দ্র পূজা করেন। ব্রজবাসীরা সবাই তাই অত্যন্ত ব্যস্ত। কৃষ্ণের বয়স তখন সাত বছর। তাঁর পিতা এবং অন্যান্য লোকেদের নানান কাজে ব্যাস্ত দেখে কৃষ্ণ জিজ্ঞাসা করলেন তোমরা কি করছো পিতা? তখন নন্দ মহারাজ বললেন যে, আমরা ইন্দ্রপূজা করছি। কৃষ্ণ জিজ্ঞাসা করলেন ইন্দ্রপূজা কেন করছো? নন্দ মহারাজ বললেন যে, দেখো, আমরা তো বৈশ্য, গোপজাতি। কৃষি এবং গোপালন হচ্ছে আমাদের জীবিকা। গো-পালনের জন্য আমাদের ঘাসের দরকার, চাষবাসের জন্য আমাদের বৃষ্টি দরকার আর ইন্দ্র হচ্ছেন বৃষ্টির দেবতা। তাই আমরা ইন্দ্রের পূজা করি যাতে ইন্দ্র আমাদের প্রতি প্রসন্ন হয়ে বৃষ্টি দান করেন। কৃষ্ণ বললেন, বাবা, সমুদ্রের মাঝখানে তো কেউ ইন্দ্র পূজা করে না, তা হলে কেন সেখানে বৃষ্টি হয়? নন্দ মহারাজ একটু চিন্তা করে দেখলেন যে তাইতো, আমরা ভাবছি ইন্দ্রকে পূজা করার ফলে বৃষ্টি হচ্ছে, কিন্তু অনেক জায়গায়তো ইন্দ্রপূজা হয় না সেখানেও তো বৃষ্টি হয়। তখন নন্দ মহারাজ বললেন, দেখো এটা আমাদের চিরাচরিত প্রথা। সেই প্রথা অনুসারে আমরা ইন্দ্রপূজা করি। কৃষ্ণ আবার জিজ্ঞাসা করলেন, এই প্রথাটি শাস্ত্রীয়, না লোকাচার। নন্দ মহারাজ একটু ফাঁপরে পড়ে গেলেন, তিনি ভাবতে লাগলেন কোন শাস্ত্রে আছে। তাই তিনি বললেন এটা লৌকিক আচার । কৃষ্ণ বললেন, দেখো বাবা, শুধু লৌকিক আচার করে আমাদের কি লাভ! আমাদের জীবিকা যে গোপালন, গাভী বর্ধনের জন্য আমরা গোবর্ধনের কাছে ঋণী, ইন্দ্রের কাছে নয় চলো আমরা গোবর্ধনের পূজা করি। যদিও কৃষ্ণ সাত বছরের ছেলে তবুও কৃষ্ণ যা-ই বলে নন্দ মহারাজ এবং অন্যান্য সকলে তা মেনে নেন। তাই নন্দ মহারাজ এবং অন্যরা সকলে মিলে ইন্দ্র পূজার যে আয়োজন করেছিলেন, তা নিয়ে গোবর্ধন পূজা করতে চললেন।
সমস্ত আয়োজনগুলোকে জড়ো করা হলো, সেটা একটা পাহাড়ের রূপ ধারন করলো। সেই পাহাড়টি ছিলো অন্নের পাহাড়। অন্নকূট, অন্নের পাহাড়। তাতে প্রথমে দেওয়া হল রুটি, লুচি, তার উপরে দেওয়া হল অন্ন। বিভিন্ন রকমের অন্ন যেমন সাদা অন্ন, লাল অন্ন, নীল অন্ন, হলুদ অন্ন, সবুজ অন্ন ইত্যাদি। যত রকমের সবজী হয়েছিল সে গুলো দিয়ে সাজানো হলো। তারপর সেই পাহাড়ের ওপর দিয়ে ঘি -এর ঝর্না বইতে লাগলো। এই ভাবে সমস্ত অন্নকুট বা অন্নের পাহাড়টি গোবর্ধনকে নিবেদন করা হলো। তখন সবাই দেখলো, একদিকে এক ছোট কৃষ্ণ দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছে, আর অন্যদিকে গোবর্ধনের জায়গায় এক বিশাল কৃষ্ণ অবস্থান করছেন, যে অন্নগুলো হাত দিয়ে তুলছে, সেই জায়গাটা আবার পূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। এই ভাবে এক কৃষ্ণ খাচ্ছে আরেক কৃষ্ণ দেখছে। এই রকম উল্লেখ আছে যে, কখনও কখনও ঐ গোবর্ধন কৃষ্ণ বলছেন আরো নিয়ে এসো, আমার আরো লাগবে তখন সকল গোপেরা আর অনেক কিছু খাবার নিয়ে এসে কৃষ্ণকে দিচ্ছে। এই ভাবে খাওয়া শেষ হলে গোবর্ধনের ঝর্ণা থেকে জল খেয়ে কৃষ্ণ ঢেকুর তুললেন। এই ভাবে তাঁর খাওয়া সমাপ্ত হলো। এই ভাবে গোবর্দ্ধন পূজা ও অন্নকূট মহোৎসবের সূচনা হলো।পরবর্তীতে শ্রীল মাধবেন্দ পুরী গোপাল বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করার পর আবারো অন্নকূট মহোৎসব চালু করেন। হরে কৃষ্ণ।
মন্তব্যসমূহ