শ্রীল প্রভুপাদের দৃষ্টিতে, বাসনা ও কর্মফল
👉 বাসনা পূর্ণ করতে কল্পতরু ভগবান কখনোও কার্পণ্য করবেন না। বাসনা পূর্ণ হবেই, কিন্তু কবে এবং কিভাবে হবে-সেটা একমাত্র পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের হাতে।
👉 বিধির বিধান অনুসারে- চেতনা, বাসনা, কর্ম-দ্বারা কিভাবে আমাদের পরবর্তী জীবন নির্ধারিত হয় সেই বিষয়ে মহাজনেরা অনেক দৃষ্টান্ত দিয়ে গেছেন। যেমন:-
**পদ্মপুরাণ অনুসারে, কেউ যদি উলঙ্গ ভাবে নিজের চেহারা দেখাতে চেষ্টা করে, তবে পরবর্তী জন্মে সে বৃক্ষশরীর লাভ করবে। কোন ব্যক্তি যদি অত্যাধিক ঘুমাতেই চায় তাহলে পরবর্তীতে সে ভালুক-শরীর লাভ করবে। আবার কেউ যদি আমিষাশী হয় তবে তার পরবর্তী জন্ম হবে কোন আমিষাশী পশুপাখির যোনিতে।
**গল্প রহস্য: এক সাধু একজন লোককে বলেছিল, তুমি মাছ খেও না! তোমার শরীর-মন ভাল থাকবে। কিন্তু সেই লোকটি তার মৎস্যভোজী ঠাকুর্দার নির্দেশে সাধুর কথা অগ্রাহ্য করেছিল। ঠার্কুদা মৃত্যুকালে মাছের চিন্তা করতে করতে পরজন্মে মৎস্য-শরীরে জন্ম নিয়ে পুকুরে বাস করছিল, লোকটি সেই পুকুরে মাছ ধরে এনে তার স্ত্রীকে রান্না করতে বলল। অদৃষ্ট কর্মফল-রহস্য এমনই যে, কে কাকে ধরছে! কে কাছে খাচ্ছে! তা বুঝে ওঠা মুশকিল।
**আবার, কেউ যদি নারদ মুনির মতো সারা দুনিয়ায় যেখানে-খুশি-সেখানে ইচ্ছোমতো যেতে বাসনা করে, কিন্তু নারদ মুনির মতো তার স্বভাব না হয়ে যদি ইতরতর কোনও প্রাণীর মতো হয়ে থাকে, তবে তার বাসনা ও কর্ম অনুসারে হয়তো সে একটি মশার দেহ লাভ করে যেখানে-যখন-খুশি চলে যেতে পারবে আনন্দে।
**আরো দেখতে পাই, কেউ হয়ত রাজসিংহাসনে নিষ্কণ্টকভাবে সারাজীবন থাকতে চায়, রাজপদ বা মন্ত্রীপদ ত্যাগ করতে চায় না। তাঁর বাসনা যদি সেইরকম দৃঢ় থাকে, কিন্তু কর্মটা রাজা বা মন্ত্রীর মতো না হয়ে ইতর প্রাণীর মতো হয়, তবে পরজন্মে সর্ববাঞ্ছাপূরণকারী শ্রীকৃষ্ণ তাঁকে ছারপোকার আসনের গদিতে সারাজীবন রাখবে।
**অন্যক্ষেত্রে, কোনও প্রভাবশালী ধনী ব্যক্তি যদি অন্য কোন দরিদ্র নিরীহ ব্যক্তিকে প্রবঞ্চনা করে তার সমস্ত সম্পদ ছিনিয়ে নেয়, তবে পরবর্তী জন্মে দেখা যাবে বঞ্চিত দরিদ্র ব্যক্তিটি দেহত্যাগ করে প্রবঞ্চকের পুএরূপে জন্ম গ্রহণ করবে এবং পরিশেষে সিন্দুকে প্রচুর টাকা জমা রেখে সেখানে একটি দেয়ালী পোকারূপে ধনী ব্যক্তিটি অবস্থান করবে সর্বদা।
**প্রভুপাদের_দিব্যশক্তি: বিদেশে শ্রীল প্রভুপাদ একটি গাছকে দেখেছিলেন, সূর্যালোকের দিকে গাছের শাখাপ্রশাখা বৃদ্ধি হওয়ার কথা। কিন্তু সেই গাছের শাখা প্রশাখা গৃহের অভিমুখে ছিল। প্রভুপাদ বলেছিলেন, সেই গৃহসৌধটি যে নির্মাণ করেছিল সে অত্যন্ত আশা করেছিল সৌধমধ্যে থেকে সুখীজীবন যাপন করবে। কিন্তু অকালেই মানবজীবন হারিয়ে সে বৃক্ষশরীর পেয়েছে এবং সেই সম্পদ আগলে রেখেছে।
**প্রভুপাদ আরো বলেছিলেন, ভারতবর্ষের এক প্রধানমন্ত্রী যিনি সুইজারল্যান্ডের পোষা কুকুর-শরীর লাভ করে দিন যাপন করছেন। শ্রীল প্রভুপাদ তাঁর ঐশী দৃষ্টিতে তা দর্শন করেছিলেন।
**বিশেষকিছু কর্মফল: লোকে দীর্ঘ আয়ু কামনা এবং পরিশেষে লাভ করতেই পারে, কিন্তু কর্মদোষে খোঁড়া বা কানা হয়ে থাকলো। সেক্ষেত্রে দীর্ঘায়ু পেয়েও কোনও লাভ নেই। পুত্রহীন পিতামাতা পুত্র কামনা করতে পারে, এবং পরিশেষে পুত্র লাভ করতে পারে। কিন্তু পুত্র এমন দুষ্ট হল যে, পিতামাতা সেই পুত্রকে আর দর্শন করতেই চায় না। লোকে লটারী খেলে লাখপতি হতে পারে, তাতে তার আনন্দ হতে পারে। কিন্তু শত্রু এসে তার গলা কেটে টাকা ছিনিয়ে নিয়ে গেল, এটাই কর্মফলের নিয়তি।
*কর্মফল থেকে মুক্তি: ভক্তিমান ব্যক্তি এই জড়জগতের কোনকিছু কামনা করে না। যা কিছু সে পায়, তা পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সেবা উপযোগ করার জন্যই যত্ন করে। শ্রীকৃষ্ণ এই ধরনের ভক্তি অনুশীলন হেতু লোকের কর্ম, কর্মবাসনা, অবিদ্যার বন্ধন সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে থাকেন।
তাই সুখে হোক কিংবা দুঃখে কখনোই শ্রীকৃষ্ণকে ভুলা উচিত নয়। হরে কৃষ্ণ।।
মন্তব্যসমূহ