সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

উত্থান একাদশী মাহাত্ম্য


কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের একাদশী মাহাত্ম্য স্কন্দপুরাণে ব্রহ্মা নারদ সংবাদে বর্ণিত আছে।

মহারাজ যুধিষ্ঠির বললেন---হে পুরুষোত্তম! কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের একাদশীর নাম আমার কাছে কৃপা করে বর্ণনা করুন।

শ্রীকৃষ্ণ বললেন---হে রাজন!

কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের একাদশী 'উত্থান' বা 'প্রবোধিনী' নামে পরিচিত। প্রজাপতি ব্রহ্মা পূর্বে নারদের কাছে এই একাদশীর মহিমা কীর্তন করেছিলেন। এখন তুমি আমার কাছে সেই কথা শ্রবণ কর।

দেবর্ষি নারদ প্রজাপতি ব্রহ্মাকে বললেন---হে মহাত্মা! যে একাদশীতে ভগবান শ্রী গোবিন্দ শয়ন থেকে জেগে ওঠেন, সেই একাদশীর মাহাত্ম্য আমার কাছে সবিস্তারে বর্ণনা করুন।

ব্রহ্মা বললেন---হে নারদ! উত্থান একাদশী যথার্থই পাপনাশিনী, পুণ্যকারী ও মুক্তি প্রদানকারী। এই ব্রত নিষ্ঠা সহকারে পালন করলে এক হাজার অশ্বমেধ যজ্ঞ ও শত শত রাজসূয় যজ্ঞের ফল লাভ হয়। জগতের দুর্লভ বস্তুর প্রাপ্তির কথা কি আর বলব। এই একাদশী ভক্তি পরায়ন ব্যক্তিকে ঐশ্বর্য, প্রজ্ঞা, রাজ্য ও সুখ প্রদান করে। এই ব্রতের প্রভাবে পর্বত প্রমাণ পাপরাশি বিনষ্ট হয়। যারা একাদশীতে রাত্রি জাগরণ করেন, তাদের সমস্ত পাপ ভস্মীভূত হয়। শ্রেষ্ঠ মুনিগণ তপস্যার দ্বারা যে ফল লাভ করেন, এই ব্রতের উপবাসে তা পাওয়া যায়। যথাযথ ভাবে এই ব্রত পালনে আশাতীত ফল লাভ হয়। কিন্তু অবিধিতে উপবাস করলে স্বল্পমাত্র ফল লাভ হয়। যারা এই একাদশীর ধ্যান করেন, তাদের পূর্বপুরুষেরা স্বর্গে আনন্দে বাস করেন। এই একাদশী উপবাস ফলে ব্রহ্মহত্যা জনিত ভয়ঙ্কর নরক যাতনা থেকে নিস্তার পেয়ে বৈকুণ্ঠগতি লাভ হয়। অশ্বমেধ যজ্ঞ দ্বারাও যা সহজে লাভ হয় না, তীর্থে স্বর্ণ প্রভৃতি দান করলে যে পুণ্য অর্জিত হয়, এই উপবাসের রাত্রি জাগরণে সেই সকল অনায়াসে লাভ হয়।

যিনি সঠিক ভাবে উত্থান একাদশী অনুষ্ঠান করেন, তার গৃহে ত্রিভুবনের সমস্ত তীর্থ এসে উপস্থিত হয়। হে নারদ! বিষ্ণুর প্রিয়তমা এই একাদশী উপবাস ফলে সর্ব শাস্ত্রে জ্ঞান ও তপস্যায় সিদ্ধিলাভ করে চরমে মুক্তি লাভ হয়। যিনি সমস্ত লৌকিক ধর্ম পরিত্যাগ করে ভক্তি সহকারে এই ব্রত পালন করেন তাকে আর পুনর্জন্ম গ্রহণ করতে হয় না। এমনকি মন ও বাক্য দ্বারা অর্জিত পাপরাশিও শ্রী গোবিন্দের অর্চনে বিনষ্ট হয়।

হে বৎস! এই ব্রতে শ্রদ্ধা সহকারে শ্রী জনার্দনের উদ্দেশ্যে স্নান, দান, জপ, কীর্তন ও হোমাদি করলে অক্ষয় লাভ হয়। যারা উপবাস দিনে শ্রী হরির প্রতি ভক্তি সহকারে দিন যাপন করেন, তাদের পক্ষে জগতে দুর্লভ বলে আর কিছু নেই। চন্দ্র ও সূর্য গ্রহণে স্নান করলে যে পুণ্য হয়, এই উপবাসে রাত্রি জাগরণ করলে তার সহস্র গুন সুকৃতি লাভ হয়। তীর্থে স্নান, দান, জপ, হোম ধ্যান আদির ফলে যে পুণ্য সঞ্চিত হয়, উত্থান একাদশী পালন না করলে সে সমস্ত নিষ্ফল হয়ে যায়। হে নারদ! শ্রী হরি বাসরে শ্রী জনার্দনের পূজা বিশেষ ভক্তি সহকারে করবে। তা না হলে শতজন্মার্জিত পুণ্য ও বিফল হয়।

হে বৎস! যিনি কার্তিক মাসে সর্বদা ভাগবত শাস্ত্রাদি অধ্যয়ন করেন, তিনি সর্বপাপ মুক্ত হয়ে সমস্ত যজ্ঞের ফল লাভ করেন। ভগবান হরি ভক্তি মূলক শাস্ত্রপাঠে অত্যন্ত সন্তুষ্ট হন। কিন্তু দান, জপ, যজ্ঞাদি দ্বারা তেমন প্রীত হন না। এই মাসে শ্রী বিষ্ণুর নাম, গুন, রূপ, লীলাদি শ্রবণ কীর্তন অথবা শ্রীমদ্ভাগবত আদি শাস্ত্র গ্রন্থ পাঠের ফলে শত শত গোদানের ফল লাভ করা যায়।

অতএব হে মুনিবর! কার্তিক মাসে সমস্ত গৌণধর্ম বর্জন করে শ্রী কেশবের সামনে হরি কথা শ্রবণ কীর্তন করা কর্তব্য। কোনো ব্যক্তি যদি ভক্তি সহকারে এই মাসে ভক্তসঙ্গে হরিকথা শ্রবণ কীর্তন করেন, তবে তার শতকুল উদ্ধার হন এবং হাজার হাজার দুগ্ধবতী গাভী দানের ফল অনায়াসে লাভ হয়। এই মাসে পবিত্র ভাবে শ্রীকৃষ্ণের রূপ গুনাদির শ্রবণ কীর্তনে দিন যাপন করলে তার আর পুনর্জন্ম হবে না। এই মাসে বহু ফলমূল, ফুল, অগুরু, কর্পূর ও চন্দন দিয়ে শ্রী হরির পূজা করা কর্তব্য।

সমস্ত তীর্থ ভ্রমণ করলে যে পুণ্য হয়, উত্থান একাদশীতে শ্রীকৃষ্ণ পাদপদ্মে অর্ঘ্য প্রদানে তার কোটি গুন সুকৃতি লাভ হয়। শ্রবণ কীর্তন, স্মরণ বন্দনাদি নববিধা ভক্তির সাথে তুলসীর সেবার জন্য যারা বীজ রোপণ, জল সেচন ইত্যাদি করেন, তারা মুক্তি লাভ করে বৈকুণ্ঠ বাসী হন।

হে নারদ! সহস্র সুগন্ধি পুষ্পে দেবতার অর্চনে বা সহস্র সহস্র যজ্ঞ ও দানে যে ফল লাভ হয়, এই মাসে হরি বাসরে একটি মাত্র তুলসী পাতা শ্রী ভগবানের চরণ কমলে অর্পণ করলে তার অনন্ত কোটি গুন লাভ করা যায়।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু ও রামানন্দ রায় সংবাদ

  শ্ৰীরামানন্দ রায় রাজা শ্ৰী প্ৰতাপরুদ্রের অধীন পূৰ্ব্ব ও পশ্চিম গোদাবরীর বিশ্বস্ত শাসন কৰ্ত্তার পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। চৈতন্য মহাপ্ৰভু যখন দক্ষিণ দেশে যাত্ৰা করেন, শ্ৰীসাৰ্বভৌম আচার্য্য বিশেষ অনুরোধ করেন মহাপ্রভু যেন শ্ৰীরামানন্দ রায়ের সঙ্গে মিলিত হন । “তোমার সঙ্গে যোগ্য তেঁহো একজন, পৃথিবীতে রসিক ভক্ত নাহি তার সম''।।চৈঃচঃ মধ্যঃ শ্রীচৈতন্য মহাপ্ৰভু দক্ষিণ দেশ অভিমুখে যাত্ৰা করেন। হরিনামের প্রেম বিতরণ করতে করতে এলেন পশ্চিম গোদাবরীর তীরে । পন্ডিত সাৰ্ব্বভৌমের অনুরোধ অনুযায়ী শ্ৰীরামানন্দ রায়ের সঙ্গে মিলিত হবার ইচ্ছা মহাপ্ৰভুর মনে সদা জাগ্রত ছিল । শ্ৰীমহাপ্ৰভু গোদাবরীর মনোহর তটে এক বৃক্ষমূলে বসে আছেন । তার অঙ্গ কান্তিতে চতুৰ্দ্দিক যেন আলোকিত হচ্ছিল । এমন সময় অনতিদূরে রাজপথ দিয়ে স্নান করতে যাচ্ছেন শ্ৰীরামানন্দ রায়, সাথে বৈদিক ব্ৰাহ্মণগনের বিবিধ বাজনা । শ্ৰীরামানন্দ রায় দূর থেকে উপবিষ্ট বৃক্ষমুলে কান্তিযুক্ত সন্ন্যাসীবরকে একদৃষ্টিতে দৰ্শন করতে লাগলেন এবং মহাপ্ৰভুও তঁকে অপলক নেত্ৰে দেখতে লাগলেন । নয়নে নয়নে হল মিলন । তারপর শ্ৰীরামানন্দ পালকি থেকে নেমে শ্ৰীমহাপ্ৰভুর চরনে দন্ডবৎ ক...

কৃষ্ণ কোন ভক্তকে কীভাবে সাহায্য করেন?????

  কৃষ্ণ কোন ভক্তকে কীভাবে সাহায্য করেন ? প্রশ্ন : আমার প্রশ্নটি খুব তুচ্ছ, কিন্তু তবুও আমি জানতে চাই কীভাবে কৃষ্ণ কোন ভক্তকে সাহায্য করেন? শ্রীল জয়প তাকা স্বামী গুরুমহারাজ: কৃষ্ণ বিভিন্ন উপায়ে একজন ভক্তকে সাহায্য করতে পারেন। আমরা তাঁর অনুগ্রহের পন্থাগুলিকে পরিমাপ করতে পারি না। যেমন ধরুন, একটি মজার গল্প আছে। একটি বড় বন্যাকবলিত এলাকায় এক লোক ছিল। সে তার ঘরে গিয়ে বলত, হে ভগবান! আমাকে এই বিশাল বন্যা থেকে উদ্ধার কর। আর তখন একটি নৌকা এল, সে বলল, না না, আমি চাই কেবল ভগবান এসে আমাকে উদ্ধার করবে। এরপর হেলিকপ্টার এল। না, না, আমাকে কেবল ভগবানই উদ্ধার করবে। এমনকি যখন কৃষ্ণ যখন নিজে সেই ব্যক্তির সামনে উপস্থিত হলেন, সে বলল, তুমি কেন আমাকে আগে বাঁচাওনি? তিনি বললেন, আমি একটি নৌকা পাঠালাম, একটি হেলিকপ্টার পাঠালাম, তুমি আর কী চাও? তো এভাবে তিনি বাহ্যিকভাবে বা অভ্যন্তরীণ উপায়ে সহায়তা করতে পারেন। গীতায় বলা আছে কৃষ্ণ জ্ঞান, স্মৃতি ও বিস্মৃতি দান করেন। সুতরাং তিনি আমাদের সংশয়ও নাশ করেন। ~শ্রীল জয়পতাকা স্বামী গুরুমহারাজ ২৪শে জুলাই, ২০১৮ চেন্নাই, ভারত

মহান বৈষ্ণব আচার্য শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুরের তিরোধান তিথি

২৬/১২/২০১৮ মহান বৈষ্ণব আচার্য শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুরের তিরোধান তিথিতে গৌড়িয় সিংহপুরুষখ্যাত এই মহান আচার্যের জীবনী জানার জন্য পড়ুন নিচের বিশেষ লেখাটি শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু যৌবনে মাত্র ৪৮ বছর বয়সে জগত থেকে অন্তর্হিত হন। যদিও তাঁর পার্ষদ এবং দৃঢ়চেতা পরম্পরা আচার্যগণ, মহান বৈষ্ণবগণ এই অভিযান এগিয়ে নিয়ে গেছেন, কিন্তু একসময় কিছুকাল পরে মহাপ্রভুর সংকীর্তন আন্দোলন অন্তর্হিত হয়। মহাপ্রভুর শিক্ষা, মহাপ্রভুর নিদের্শনা এবং মহাপ্রভুর ধাম এই জগৎ থেকে অন্তর্হিত হয় এবং তদস্থলে সকল অপসম্প্রদায় গুলো আবির্ভূত হয়ে এমন শিক্ষার বিস্তার ঘটালো যা সম্পূর্ণরূপে মহাপ্রভুর শিক্ষার বিপরীত। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর শিক্ষা সম্পূর্ণরূপে পবিত্র ধর্মের নীতির ভিত্তিতে গঠিত, কিন্তু তাদের সেই ক্রিয়াকর্মগুলো ছিল সম্পূর্ণ অধার্মিক। এটি কলিযুগের আরেকটি চরিত্র। এই যুগ অধর্মের, তাই অধর্মীয় নীতিসমূহের ব্যাপক প্রসার ঘটবে এবং ধার্মিক নীতিসমূহ উপেক্ষিত হবে। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর অন্তর্ধানের পরে তা ঘটেছিল। অল্পকথায় বলতে গেলে, তাঁরা চৈতন্য মহাপ্রভুর নামে ধর্মের স্তম্ভস্বরূপ ৪টি বিধিনিষেধ ভঙ্গ ...