সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

শ্রী রাস পূর্ণিমা


আসুন রাসলীলা সম্পর্কে জেনে নিই। 

পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তার বিভূতি শ্রীমতি রাধারাণী সহিত গোপীকাগণ কে নিয়ে বৃন্দাবনের রাগমন্ডলে মহারাস লীলা করেন।

(১) রাস কী ?

উঃ ঈশ্বরের সাথে আত্মার মহামিলনই রাস।

কার্তিকের এই পূর্ণিমার রাতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বৃন্দবনের নিধি বনে বসে তার মোহন বাঁশি নিয়ে বাজাঁতে শুরু করলেন। বাঁশির মধুর আওয়াজ শুধু মাত্র বৃন্দাবন নয়, অখিল ব্রহ্মান্ড কে মোহিত করে ফেলছে। শ্রীকৃষ্ণ যে সকল গোপীদের কথা দিয়েছিলেন তাদের অনেকেই এই রাতের অপেক্ষায় আগে থেকেই সুন্দরবস্ত্র এবং সেঁজে প্রস্তুত ছিলেন।এই গোপীদের মধ্যে কেউ ছিল ৫ বছরের বালিকা, কেউবা ছিল ১৮ বছরের যুবতি আবার কেউ ৮০ বছরের বৃদ্ধা।তারা সবাই যে যেখানে ছিল সবকিছু ছেড়ে নিধিবনের দিকে ছুটে চলে।

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তখন নিধিবনের কুন্জে বসে ছিলেন, অনন্ত কোটি গোপী বৃন্দ ভগবানের চরণের নিজেদের সপে দিয়ে বলল তারা ভগবানের সাথে নৃত্য করতে উত্‍সুক। 

ভগবান জিজ্ঞেস বললেন তারা কেন তাদের স্বামীদের ছেড়ে এখানে এসেছে? গোপীবৃন্দ উত্তরে বলল, এসকল স্বামী ক্ষণিকের। এসব স্বামী শুধু মাত্র মায়া দ্বার আবদ্ধ করে। এরা মাটির মূর্তির মত, যতদিন জগতস্বামী তারা পায় নি ততদিন শুধু মাত্র এই স্বামীর সেবা করেছে তারা।

ভগবান তাদের কথায় প্রসন্ন হয়ে রাস নৃত্য শুরু করে, রাসের কথা শুনে সকল দেবদেবীরা রাসে যোগ দিতে চেষ্টা করে কিন্তু তাদের এখানে আসার অধিকার ছিল না।যারা রাস লীলায় অংশ নেয় তারা পূর্ব জন্ম বড় বড় তপস্যী ছিল, তারা ভগবানের কাছে বর হিসেবে ভগবানের সাথে লীলা করবার সুযোগ পায়।

দেবী পার্বতী রাসে অংশ নেবার জন্য তৈরী হচ্ছেন এমন সময় ভগবান শিব পার্বতি কে বলেন তাকেও রাসলীলায় নিয়ে যেতে। পার্বতি বলেন রাস শুধু মাত্র মহিলা দের জন্য, তখন শিব মেয়েদের বস্ত্র পরে, মাথায় ঘোমটা দিয়ে রাসলীলায় অংশ গ্রহন করতে যান।

নৃত্য শুরু হবার পর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সকল গোপীদের জন্য আলাদা আলাদা রুপে নৃত্য করেন।ঠিকরাস শুরু হবার পর সেখানে কামদেব এসে হাজির।ভগবান কামদেব কে জিজ্ঞেস করেন তুমি কেন এখানে এসেছ? তোমায় কে অনুমতি দিয়েছে?

উত্তরে কামদেব বলেন যেখানে নারী পুরুষ একাকি থাকে সেখানে তো আমি প্রকৃতিগত ভাবে আসি।আপনারা সবাই জানেন কামদেব হল দৈহিক প্রেম বা মিলনের দেবতা।সুতরাং, কামদেব তার সভাব সুলভ ভাবে যখন কাম বাণ শ্রীকৃষ্ণের দিকে ছুড়ে তখন শ্রীকৃষ্ণ তার কাম বান ধ্বংশ করে তাকে গাছের সাথে বেঁধে রাখে। এবং এর থেকে প্রমানিত হয় রাসলীলায় কোন অশ্লীষতা নেই এবং পবিত্র ভক্ত এবং ভগবানে প্রেমের উত্‍সব।

কিছুক্ষণ নৃত্যের পর গোপীদের মনেঅহংকার এসে যায়, তারা ভাবতে থাকে কৃষ্ণ শুধু মাত্র তাদের।আমরা জানি অহংকার পতনের মূল! যেই কথা সেই কাজ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ শ্রীমতিরাধারাণী কে নিয়ে অদৃশ্য হয়ে যান।রাধারাণীর সাথে কিছুক্ষণ বিহারের পর রাধার মনেও অহংকারের জন্ম হয়, তিনিও মনে করতে থাকেন শ্রীকৃষ্ণ শুধুই উনার।শ্রীকৃষ্ণরাধারানী কে ছেড়েও চলে যান।

কিছুক্ষণ পর রাধা এবং গোপীদের দেখা হয়। তারা সবাই একসাথে হয়ে ভগবানের নিকট তাদের ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং কীর্তন করতে থাকেন।ভগবান তাদের ক্ষমা করে দেন এবং পুনরায় নৃত্য শুরু করেন।এরপর থেকে মহারাস শুরু হয়।

সুতরাং, যারা রাসলীলা সম্পর্কে অপপ্রচার করে তাদের উচিত শ্রীমদ্ভাগবত পড়া। 

জয় রাধারানী।

জয় গোপীগণ।

জয় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ।

পোষ্টটি #শেয়ার করে সবাইকে জানতে সাহায্য করুন।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু ও রামানন্দ রায় সংবাদ

  শ্ৰীরামানন্দ রায় রাজা শ্ৰী প্ৰতাপরুদ্রের অধীন পূৰ্ব্ব ও পশ্চিম গোদাবরীর বিশ্বস্ত শাসন কৰ্ত্তার পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। চৈতন্য মহাপ্ৰভু যখন দক্ষিণ দেশে যাত্ৰা করেন, শ্ৰীসাৰ্বভৌম আচার্য্য বিশেষ অনুরোধ করেন মহাপ্রভু যেন শ্ৰীরামানন্দ রায়ের সঙ্গে মিলিত হন । “তোমার সঙ্গে যোগ্য তেঁহো একজন, পৃথিবীতে রসিক ভক্ত নাহি তার সম''।।চৈঃচঃ মধ্যঃ শ্রীচৈতন্য মহাপ্ৰভু দক্ষিণ দেশ অভিমুখে যাত্ৰা করেন। হরিনামের প্রেম বিতরণ করতে করতে এলেন পশ্চিম গোদাবরীর তীরে । পন্ডিত সাৰ্ব্বভৌমের অনুরোধ অনুযায়ী শ্ৰীরামানন্দ রায়ের সঙ্গে মিলিত হবার ইচ্ছা মহাপ্ৰভুর মনে সদা জাগ্রত ছিল । শ্ৰীমহাপ্ৰভু গোদাবরীর মনোহর তটে এক বৃক্ষমূলে বসে আছেন । তার অঙ্গ কান্তিতে চতুৰ্দ্দিক যেন আলোকিত হচ্ছিল । এমন সময় অনতিদূরে রাজপথ দিয়ে স্নান করতে যাচ্ছেন শ্ৰীরামানন্দ রায়, সাথে বৈদিক ব্ৰাহ্মণগনের বিবিধ বাজনা । শ্ৰীরামানন্দ রায় দূর থেকে উপবিষ্ট বৃক্ষমুলে কান্তিযুক্ত সন্ন্যাসীবরকে একদৃষ্টিতে দৰ্শন করতে লাগলেন এবং মহাপ্ৰভুও তঁকে অপলক নেত্ৰে দেখতে লাগলেন । নয়নে নয়নে হল মিলন । তারপর শ্ৰীরামানন্দ পালকি থেকে নেমে শ্ৰীমহাপ্ৰভুর চরনে দন্ডবৎ ক...

কৃষ্ণ কোন ভক্তকে কীভাবে সাহায্য করেন?????

  কৃষ্ণ কোন ভক্তকে কীভাবে সাহায্য করেন ? প্রশ্ন : আমার প্রশ্নটি খুব তুচ্ছ, কিন্তু তবুও আমি জানতে চাই কীভাবে কৃষ্ণ কোন ভক্তকে সাহায্য করেন? শ্রীল জয়প তাকা স্বামী গুরুমহারাজ: কৃষ্ণ বিভিন্ন উপায়ে একজন ভক্তকে সাহায্য করতে পারেন। আমরা তাঁর অনুগ্রহের পন্থাগুলিকে পরিমাপ করতে পারি না। যেমন ধরুন, একটি মজার গল্প আছে। একটি বড় বন্যাকবলিত এলাকায় এক লোক ছিল। সে তার ঘরে গিয়ে বলত, হে ভগবান! আমাকে এই বিশাল বন্যা থেকে উদ্ধার কর। আর তখন একটি নৌকা এল, সে বলল, না না, আমি চাই কেবল ভগবান এসে আমাকে উদ্ধার করবে। এরপর হেলিকপ্টার এল। না, না, আমাকে কেবল ভগবানই উদ্ধার করবে। এমনকি যখন কৃষ্ণ যখন নিজে সেই ব্যক্তির সামনে উপস্থিত হলেন, সে বলল, তুমি কেন আমাকে আগে বাঁচাওনি? তিনি বললেন, আমি একটি নৌকা পাঠালাম, একটি হেলিকপ্টার পাঠালাম, তুমি আর কী চাও? তো এভাবে তিনি বাহ্যিকভাবে বা অভ্যন্তরীণ উপায়ে সহায়তা করতে পারেন। গীতায় বলা আছে কৃষ্ণ জ্ঞান, স্মৃতি ও বিস্মৃতি দান করেন। সুতরাং তিনি আমাদের সংশয়ও নাশ করেন। ~শ্রীল জয়পতাকা স্বামী গুরুমহারাজ ২৪শে জুলাই, ২০১৮ চেন্নাই, ভারত

মহান বৈষ্ণব আচার্য শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুরের তিরোধান তিথি

২৬/১২/২০১৮ মহান বৈষ্ণব আচার্য শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুরের তিরোধান তিথিতে গৌড়িয় সিংহপুরুষখ্যাত এই মহান আচার্যের জীবনী জানার জন্য পড়ুন নিচের বিশেষ লেখাটি শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু যৌবনে মাত্র ৪৮ বছর বয়সে জগত থেকে অন্তর্হিত হন। যদিও তাঁর পার্ষদ এবং দৃঢ়চেতা পরম্পরা আচার্যগণ, মহান বৈষ্ণবগণ এই অভিযান এগিয়ে নিয়ে গেছেন, কিন্তু একসময় কিছুকাল পরে মহাপ্রভুর সংকীর্তন আন্দোলন অন্তর্হিত হয়। মহাপ্রভুর শিক্ষা, মহাপ্রভুর নিদের্শনা এবং মহাপ্রভুর ধাম এই জগৎ থেকে অন্তর্হিত হয় এবং তদস্থলে সকল অপসম্প্রদায় গুলো আবির্ভূত হয়ে এমন শিক্ষার বিস্তার ঘটালো যা সম্পূর্ণরূপে মহাপ্রভুর শিক্ষার বিপরীত। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর শিক্ষা সম্পূর্ণরূপে পবিত্র ধর্মের নীতির ভিত্তিতে গঠিত, কিন্তু তাদের সেই ক্রিয়াকর্মগুলো ছিল সম্পূর্ণ অধার্মিক। এটি কলিযুগের আরেকটি চরিত্র। এই যুগ অধর্মের, তাই অধর্মীয় নীতিসমূহের ব্যাপক প্রসার ঘটবে এবং ধার্মিক নীতিসমূহ উপেক্ষিত হবে। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর অন্তর্ধানের পরে তা ঘটেছিল। অল্পকথায় বলতে গেলে, তাঁরা চৈতন্য মহাপ্রভুর নামে ধর্মের স্তম্ভস্বরূপ ৪টি বিধিনিষেধ ভঙ্গ ...